Fit Fridays

Volume I Issue VI

আপনার সু-স্বাস্থ্যে, ফিট ফ্রাইডেজ আপনার পাশে! 🌟

আরবি (হিজরী) ক্যালেন্ডারের বারোটা মাসের মধ্যে, নবম মাস রমাজান। এই মাস বিশ্বের সমস্ত ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে অত্যন্ত মর্যাদাশীল মাস। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজা রাখা, অভাবীদের ক্ষুধার যন্ত্রনা উপলব্ধি করার মাস রমাজান মাস। তবে শুধুমাত্র না খেয়ে থাকা নয়, আত্মসংযম শেখায় এই পবিত্র মাস। ৩০ দিনের নির্জলা উপবাস বিজ্ঞানসম্মতভাবে যেমন শরীরের কোষগুলো পরিষ্কার করতে থাকে, সেরকমই সমস্ত ইন্দ্রিয় ও নিজেদের চরিত্র সংশোধনও করতে হয় এই মাসে। মনের খারাপ চিন্তার বশবর্তী না হয়ে অন্তরের ভালো দিকটা তুলে ধরা, সহমর্মিতা, ভাতৃত্ববোধ, একে অপরের পাশে দাঁড়াতে শেখায় রমাজান মাস। ধনীরা তাদের সম্পদের একটা অংশ অভাবী-দরিদ্রদের দান করে (যাকাত ও সাদকা), প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে ইফতার আদান-প্রদান, রোজার শেষে ঈদ উপলক্ষে আশেপাশের মানুষদের কিছু উপহার দেওয়া হয় এই মাসে। ৩০ দিনের এই আত্মশুদ্ধি - সহমর্মিতা, সমবেদনা, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা যেন অন্ততঃ সামনের রমাজান মাস পর্যন্ত আমাদের সবার মধ্যে থাকতে পারে এবং তা দিয়ে এক সুন্দর সমাজ গড়ে ওঠে, তবেই সফল হবে পবিত্র মাহে রমাজানের প্রকৃত উদ্দেশ্য।

রমাজান মাসে অধিকাংশ ডায়াবেটিস রোগীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন, রোজা রাখতে পারবেন কিনা। কারণ রোজায় খাদ্যাভ্যাস ও খাওয়ার সময়সূচিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারদাবার সুনিয়ন্ত্রিত ও সুশৃঙ্খল হতে হবে, রমজানের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে এবং কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তাহলে বেশির ভাগ ডায়াবেটিস রোগীই নিশ্চিন্তে রোজা রাখতে পারবেন।

রোজা রেখে ডায়াবেটিক পেশেন্টদের যা করণীয় : 

  • রমাজানে রক্তে সুগার পরিমাপ করুন

    রমাজান মাসেও সময় নির্ধারণ করে রক্তে শর্করা পরিমাপ করতে হবে। খারাপ লাগলে বা হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে রক্তে গ্লুকোজ মাপতে হবে।

    হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণগুলো হচ্ছে দুর্বল লাগা, মাথা ঝিমঝিম করা, চোখে ঝাপসা দেখা, ঘাম হওয়া, হাত কাঁপা, মাথা শূন্য বোধ হওয়া ইত্যাদি।

  • রোজা রেখে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা যায় এবং ইনসুলিন নেওয়া যায়। ইফতারের দুই ঘণ্টা আগে, ইফতারের দুই ঘণ্টা পর এবং দিনের মধ্যভাগে ব্লাড সুগার পরীক্ষা করতে পারেন। এতে করে আপনার রোজা ভাঙ্গবেনা।

  • বাড়িতে গ্লুুকোমিটার মেশিন দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে ব্লাড সুগার কমে বা বেড়ে যাচ্ছে কি না।

 ডায়াবেটিক পেশেন্টদের কোন অবস্থায় রোজা না রাখাই শ্রেয়?

• যাদের সাম্প্রতিক ব্লাড সুগার কমে যাওয়ার ইতিহাস আছে

• যারা কিডনি রোগী, ডায়ালিসিস চলছে

• যারা গর্ভবতী এবং ইনসুলিন নিচ্ছেন

 রোজার ওষুধ ও ইনসুলিন : 

ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ (এন্ডোনাইনোলোজিস্টের) পরামর্শ অনুযায়ী যেসব ডায়াবেটিস রোগী ইনসুলিন নেন, চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তা সমন্বয় করে নেবেন।

ডায়াবেটিসের কিছু ওষুধ রক্তে শর্করা বেশি কমিয়ে দিতে পারে। সে ধরনের ওষুধ সমন্বয় করতে হবে। এ ছাড়া কিছু ওষুধ প্রস্রাবের সঙ্গে গ্লুকোজ বের করে দেয়। এসব ওষুধ পানিশূন্যতা তৈরি করতে পারে। ওষুধ বেশির ভাগ ইফতারের সময় গ্রহণ করা ভালো। রোজা রেখে ইনসুলিন নিলে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না।

ডায়াবেটিক রোগীরা যখনই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়ার লক্ষণ অনুভব করবেন, তখনই তারা গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করবেন। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা প্রতি লিটারে ৩ দশমিক ৯ মিলি মোলের নিচে নেমে গেলে গ্লুকোজ বা চিনির শরবত খেয়ে রোজা ভেঙে ফেলবেন। আবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ১৬ দশমিক ৬ মিমি মোলের ওপরে চলে গেলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ। তখন রোজা ভেঙে ফেলতে হবে।

রমাজান মাসে ডায়াবেটিক পেশেন্টদের খাদ্য তালিকা যেমন হওয়া উচিত:

রমাজান মাসে সাধারণত ইফতার ও সাহ্‌রিতে মূল খাবার গ্রহণ করা হয়। লক্ষ্য রাখতে হবে যে রমাজান মাসেও দৈনিক ক্যালরি চাহিদা একই রকম থাকবে, কেবল সময়সূচিতে পরিবর্তন আসতে পারে। অন্য সময়ের মতোই চিনি বা চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া নিষেধ। জটিল শর্করা যেমন: লাল চালের ভাত, রুটি, ওটস, কর্নফ্লেক্স খাওয়া ভালো। যথেষ্ট পরিমাণে শাকসবজি, তাজা ফলমূল খেতে হবে।

ইফতারে অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া ও তেলযুক্ত উচ্চ ক্যালরি খাবার পরিহার করা উচিত। একসঙ্গে অনেক খাবার না খেয়ে ভাগ করে খাওয়া উচিত। এ ছাড়া কয়েকটি বিষয়ের দিকে লক্ষ রাখুন।

সাহ্‌রি না খেয়ে রোজা রাখবেন না। সাহ্‌রিতে লবণ মিশ্রিত জল ও খাঁটি ঘি-তে ভাজা দুটো ডিম খেতে পারেন। এতে যদি খিদে থেকে যায় তাহলে ভাত বা রুটি সাথে সবজি, মাছ খেতে পারেন।

ইফতারে শরবত বা মিষ্টি জুস না খেয়ে ডাবের পানি, ফলের রস, লেবুপানি পান করতে পারেন।

ইফতার ও সাহ্‌রির মাঝখানে দুধ, ফলমূল, চিড়া, দই ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

রাতের বেলা পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

রমাজান মাসে দিনের বেলায় ব্যায়াম বা ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে হাঁটাহাঁটি না করাই ভালো। সন্ধ্যার পর হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে। প্রয়োজনে ইফতারের দুই ঘণ্টা পর হাঁটা বা ব্যায়াম করা যায়। তবে তারাবীর নামাজ পড়লে আর ব্যায়াম না করলেও চলবে।

পরামর্শ দিয়েছেন ডা. আবুল ফয়সাল মোহাম্মদ নুরুদ্দীন চৌধুরী

রোজার স্বাস্থ্যগত উপকার

  • শরীরের বিপাকক্রিয়া ভালো হয়

  • ওজন কমে

  • উচ্চ রক্তচাপ ভালো নিয়ন্ত্রণে থাকে

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে

  • শরীরের বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশিত হয়।

পরামর্শ দিয়েছেন: ডা. মো. মাজহারুল হক তানিম (হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ) ও ডা. সিরাজুল ইসলাম, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

Reply

or to participate.